Header Ads

একটি প্রেম পত্র

তোমার অনেক যত্নে বোনা কথার গাঁথুনী আমার প্রযত্নে এসে পৌঁছেছে সেই কবেই।
তারপর গড়িয়ে গেল কত জল।
আজ এই অপরাহ্নে দাঁড়িয়ে যখন নিজস্ব হিসেবের খাতা খুলি- অবাক লাগে।
আমার সঞ্চয় বলে কিছু নেই- লাভ বলে কিছু নেই।
প্রতিটি পাতার যোগফলে শুধু- দুঃখ- বেদনা আর হতাশার হলুদ বর্ণ শব্দ।
পৃথিবীর বহু মানুষ দেখেছি, জীবনে বহু রং দেখেছি, নানা গন্ধ শুকেছি,
মদ খেয়েছি- মাতাল হয়ে নিজেকে গালি দিয়েছি কুকুর বলে,
তবে সত্যি বলছি- সুখ খুঁজিনি। খুঁজেছিলাম আশ্রয়। সেটিও জোটেনি।

ভেবেছিলাম যাযাবর হবো। আমার নিজস্ব কোন আশ্রয় থাকবেনা,
থাকবেনা কোন পিছুটান, এমনকি থাকবেনা কোন প্রত্যাশা।
না শেষ পর্যন্ত যাযাবরও হতে পারলামনা, একদিন একটা চিঠির কারণে।

আমি নাকি কচুরিপানা। যার সুন্দর ফুল হয় অথচ শেকড় থাকেনা মাটির গভীরে গাঁথা।
এক কথায় তিনি বোঝালেন- আমি জলে ভাসা অস্তিত্বহীন একটি মানুষ,
যার শুধু সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, অবলম্বন খোঁজা যায়না।
আর জলের বুকে বসে জল পান নয়।
মাটিতে শেকড় গেড়ে গভীর থেকে জল তুলে তবেই এবার তৃষ্ণা মেটাবো।
তাতে আমার শাখায় যদি ফুল নাও ফোটে ক্ষতি নেই, ঝড়তো বুঝবে আমার অস্তিত্ব কতটা দৃঢ়!
কিন্তু বড় বেশী ক্লান্ত হয়ে আছি- আর পারছিনা। আবারো নিজের কাছ থেকে পালাতে ইচ্ছে করে।
হয়তো আবার কোথাও হারিয়ে যাবো দূর বহু দূরে। সেইতো মঙ্গল। নয় কি?
কোন প্রত্যাশা নেই তোমার কাছে। ভয় নেই,
কোনদিন কোন দাবিনামা হাতে এসে বলবোনা- পূরণ করো সখি।
এমনকি কোনদিন ভুল করেও বলবোনা ভালোবাসি তোমাকে। না, এ কোন প্রেমপত্র নয়।
আমি কোন প্রেমপত্র লিখিনা কারণ সেখানে মিথ্যে লিখতে হয়।
তাই বলে নিজেকে সত্যবাদী বলে দাবি করছিনা, আমি মোটেও সত্যবাদী নই।
তবে চিঠিতে আমি কখনো মিথ্যাচার করিনা, এ আমার অহংকার।
আমার প্রত্যাশা গুলো ঘাসফুলের মত ক্ষুদ্র এবং ক্ষনস্থায়ী।
মানুষের পায়ের তলায় যার জীবন ও মৃত্যু।
তবে আমার স্বপ্নগুলো তোমার আকাশের চেয়েও বড় ও সুন্দর।
যেখানে আমি আমার কল্পনার সাতরঙ পাখায় হাওয়া লাগিয়ে ভেসে বেড়াতে পারি ইচ্ছে মতো।
সে কারণেই- আমার এ সহজ স্বীকারোক্তি বহুদিন বেশ ভালো ছিলাম।
কিন্তু ইদানিং কেনো জানি বড় নিঃসঙ্গ লাগে, বড়একা লাগে। টের পাই,
বুকের মধ্যে একাকী একটি রাজহাঁস দিনেরাতে সজোরে ডানা ঝাপটায়,
চায় আকাশ কিংবা স্বচ্ছ জলের দীঘি।
আজো তোমাকে বুঝে উঠতে পারিনি, যদিও মানুষ চেনা এত সহজ কাজ
নয় তবুও তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবি- এবার বুঝি দেখতে পাবো-
চমৎকার ফুটেআছে এক শ্বেতপদ্ম। অথচ তোমার চোখে যতবারই তাকিয়েছি
ঠিক ততোবারই দেখেছি- সেখানে শুয়ে আছে কালো রঙের এক প্রজাপতি।
তুমি দেখে নিও, একদিন এই প্রজাপতিটাকে সত্যিই আমি খুন করবো।
আমার কেনো জানি ভালো- লাগেনা। যে কোন দিন কোথাও অনেক দূরে
চলে যাবো কাউকে কোন কিছু না বলেই। অথবা কোন একদিন গভীর ঘুমের
মধ্যে আমার ইচ্ছাকৃত মৃত্যু হবে আর এটিই হবে আমার সর্বশেষ বিলাসিতা।
সুখ আমার সতীন, আনন্দ আমার শত্রু। তুমি যেমন সাপকে ভয় পাও আমিও
তেমনি ভয় পাই এই আমার আমিকে। আমি দুঃখকে অবলীলায় প্রিয়তমা ভেবে
তার বুকের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে খুব সহজেই ঘুমিয়ে যেতে পারি। যেমন গত
রাতে তুমি ছিলে সারারাত। রক্ত নদী সাঁতরিয়ে তীরে এসে যদি দেখি মহুয়াবন
পল্লবহীন, কান্না আসে তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে যায়, তখন সুধা নয় বেদনার নীলরও প্রিয় পানীয়।
ভোরবেলায় কোন এক স্বপ্নকে ঘিরে হয়েছিলাম উচ্ছসিত, আনন্দধারায় করেছিলাম স্নান। এখন দুপুর।
আমি সংকিত সেই স্বপ্নসুখে। এক বৃদ্ধ শকুন বাতাসে তার আগাম মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে গেলো এই মাত্র।
আমিও প্রস্তুত। সন্ধ্যার আগে, ঠিক গোধুলীলগ্নে চন্দন কাঠের চিতায় শুইয়ে দেবো
আমার সেই ভোরের স্বপ্নকে। তোমাকে আমন্ত্রণ বন্ধু এসো মুখাগ্নি করতে।
পুজোর ফুলের রঙ কি জানো? সাদা।আর দেবতারা চরণে সাদা রঙের অর্ঘ্যই বেশী ভালোবাসে।
মজার কথা কি জানো পৃথিবীর অধিকাংশ সাদা ফুল ফোঁটে রাত্রির গাঢ় অন্ধকারে।
তারা জন্ম নেয় সবার অলক্ষে, নিরবে, নিভৃতে। শিশির জমে দীর্ঘশ্বাসে।
পথচারীর ক্লান্ত চোখ সুন্দরের মুখ দর্শনে ব্যর্থ হলে, বাতাস যন্ত্রনা দেয়-
দুঃখ করোনা বন্ধু, আজ মিলন হবে তোমাতে আমাতে আর দোলনচাঁপাতে।
দেবতারা অতিথি হয় আসবেন মর্তে। আনন্দ উৎসবে রাত্রি হবে ভোর। তারপর?
তারপর সেই চিরায়ত নিয়তি- যে যার মত ফিরে যাবে, গন্ধ ফুরোবে,
একা কাঁদবে সাদা ফুল। আমি অন্ধকারে ফোঁটা সেই সাদা ফুল। বুকের ভেতর কষ্টের নৈনিতাল,
মুষ্ঠিবদ্ধ করতলে চেপে রেখেছি সমুদ্র- সম জেদ। আর এক ভীষণ প্রতিজ্ঞা ছিলো নিজের কাছের নিজের।
পুজোর ফুল আর হবেনা কখনো, আর কারো চরণে নিজেকে দেবোনা জলাঞ্জলী।
কিন্তু পারলাম কি? পারলামনা।
আমি যখন কাউকে দেবতা ভাবি কিংবা দেবী, তখন আর মানুষ থাকিনা হয়ে যাই পুজারী।
সব কিছু হয়ে যায় ওলট পালট। ভালো- লাগেনা পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ, ভালো-
লাগেনা মানুষ, ফুল, ফল, পাখি, আকাশ অথবা নদী। তখন শুধু একটাই প্রার্থনা আমার কালো চোখে,
দেবী তার রাঙা ঠোঁটে আলতো চুমু দিয়ে বলুক ঘুমোও পুজারী, আমি আছি।
সেদিন প্রশ্ন করেছিলে আমি খুব রাগী কিনা? না, আমার খুব বেশী রাগ নেই তবে আমি অসম্ভব জেদী।
একবার জেদী হয়ে উঠলে অনেক অসাধ্যই সাধন করতে পারি।
আর এজন্যে অনেক মাশুল দিতে হয়েছে জীবনে এবং বাকী জীবনে আরো দিতে হবে তা জানি।
আমার ভেতর অনেক বাজে কিছু ব্যাপার আছে, আচ তোমাকে বলি- এই যেমন,
গাছ থেকে গোলাপ ছিঁড়ে আমি হাতে নিতে চাই কারণ যতক্ষণ সে বাগানে ততক্ষণ সে আমার নয়, সে সবার।
কিন্তু যখন সেটিকে ছিঁড়ে আমি হাতে নিই তখন থেকে গোলাপটি আর কারো নয়। শুধু আমার শুধুই আমার।
“ইতিহাস তুমি কেঁদোনা, পরিবর্তন আসে- চির ক্লান্তির ভাবনা তোমাকেই ভালবাসে…”এটা একটা কবিতার লাইন।
শুনেছো কিংবা পড়েছো মনে হয়। মানুষ যতো মানুষের কাছাকাছি হয়, ততো প্রকাশিত হয় মানুষের ভুল-ত্রুটি,
ভাল-মন্দের রূপ, বদলে যায় পূর্ব নির্ধারিত সকল ধারণা। যে ভাল কিছুর মোহে আবিষ্ট হয়ে একদিন পথচলা শুরু হয়,
দিনের শেষে সেই মোহ কেটে গেলে বেঁচে থাকে শুধু বাস্তবতা।
আকাশ সে কখনো আমার নয়। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় একটুকরো
আকাশ ছিঁড়েএনে যদি আমার শোবার ঘরের ছাদে ঝুলিয়ে দিতে পারতাম তাহলে বলতে পারতাম-
এই যে একটুকরো আকাশ, এ শুধু আমার। এতটি মানুষ যাকে আমার ভালোলাগে, যাকে আমি ভালোবাসি,
দিনরাত যার পুজো করি তাকেও চাই সে শুধু আমার থাক। জানি এ অসম্ভব চাওয়া।
আর এ কারণেই আজো নিজস্ব একবারে নিজস্ব বলে কিছুই নেই পৃথিবীতে, এই আমার আমি ছাড়া।
তাই নিজেকে এত ভালোবাসি। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। নানা ধরনের স্বপ্ন। কখনো স্বপ্ন দেখি,
আমি এক চমৎকার প্রেমিক, কখনো এক রাঙা বউ এর আদরের স্বামী কখনো স্বপ্ন দেখি
আমি এক ফুটফুটে সোনামনির গর্বিত বাবা। কখনো নিজেকে ভাবি ঝর্ণার উৎস, বৃ্ষ্টির শব্দ,
কখনো নিজেকে গোধুলী আকাশে পথহারা একাকী বলাকা, কখনো পৃথিবীর পথে নিরব হেঁটে চলা পথচারি।
কখনো হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি আমি, আমার সামনে অশ্রুসজল প্রিয়মানুষের কাতর একজোড়া দৃষ্টি।
আরো কত যে স্বপ্ন তার কি কোনো হিসেব আছে। তবে এটিও ঠিক পুরো স্বপ্ন আমার কখনোই
দেখা হয়ে উঠেনি কারণ আমার স্বপ্নেরা বড় বেশী আধুনিক, তারা প্রসব ব্যথার চেয়ে সিজারিয়ানকেই শ্রেয়তর ভাবে।
তাই সব সময় আমার দু’চোখে ভরে থাকে অপূর্ণ মাতৃত্বের জমাট বাঁধা কান্না।
আমি তোমাকে সত্যই ভালোবাসি। এই যে ভালোবাসি এটা আগে বুঝিনি। এখন বুঝি।
তবে আর কখনোই এই কথাটি বলবোনা। তোমার কথা মত তা শুধু ভেতরেই রেখে দিলাম।
আমি তোমাকে স্বপ্ন দেখতে শেখাবো তবে স্বপ্নের ঠিকানা দেবোনা। তোমাকে আগেও বলেছি আজো বলছি-
তোমাকে আমি সুখি সুন্দর দেখতে চাই। বিনিময়ে কোন প্রত্যাশা নেই এতটুকু।আমি শুধু তোমাকে জানতে চাই,
তোমার কষ্টটাকে জানতে চাই।
তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আর এই কৃতজ্ঞতা মন থেকেই এসেছে কারণ মানুষ হিসেবে
মানুষকে বুঝে নেবার ও সম্মান দেবার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা কখনো মেকি মনে হয়নি।
ভালবাসা আদায় করে নেবার যে ব্যর্থতা তার গ্লানি শুধু আমাকেই বইতে হবে।
অথচ আমার বিশ্বাস আমার মাঝে ভালবাসার স্বত্ত্বা এখনো সেভাবেই আছে, আগেও তা ছিল।
এই ব্যর্থতার কথা একান্ত বন্ধুর মতো তোমার কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারলাম তবে এতে
অন্য কারো লাভ হলো কিনা জানিনা – কিন্তু আমার কি হলো,
আমি কি পেলাম তা সম্ভবত বুঝানো যাবেনা কোনদিনও।
আর বুঝিয়েই বা কতটা লাভ বা ক্ষতি তার হিসেব আমরা কেউ কখনো করবোনা ।

No comments

Powered by Blogger.